মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর যুগে কোরবানির ঈদ ! ইতিহাস, সুন্নাহ ও করণীয়
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর যুগে কোরবানির ঈদ ! ইতিহাস, সুন্নাহ ও করণীয়
আপনারা যারা "মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর যুগে কোরবানির ঈদ ! ইতিহাস, সুন্নাহ ও করণীয়" সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, মহানবী (সা.)–এর যুগে কোরবানির ঈদ কেমন ছিল? কোরবানির মূল উদ্দেশ্য কী? নবীজির (সা.) সুন্নাহ অনুসারে কোরবানির নিয়ম, পশু বণ্টন ও দোয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পড়ুন সহজ বাংলায়।
চলুনআজকের এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি প্রধান কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
কোরবানির পেছনে লুকিয়ে থাকা আত্মত্যাগের ইতিহাস
হযরত ইব্রাহিম (আ.)–এর পরীক্ষার কাহিনি
কোরবানির ঈদের শুরু হযরত ইব্রাহিম (আ.)–এর সময় থেকে। একদিন ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখলেন, তিনি তাঁর ছেলে ইসমাইল (আ.)–কে আল্লাহর আদেশে কোরবানি করছেন।
স্বপ্ন কিন্তু সাধারণ বিষয় না। নবীদের স্বপ্ন ওহীর মতো সত্য হয়।
তাই তিনি কোনো দ্বিধা না করে ছেলেকে বললেন,
“হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। তুমি কী বলো?”
(সূরা সফফাত, আয়াত ১০২)
পুত্র ইসমাইল (আ.) কী বললেন জানেন?
“বাবা, আপনি যা আদেশ পাচ্ছেন, তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।”
(সূরা সফফাত, আয়াত ১০২)
সুবহানআল্লাহ! কী অবাক করা আত্মসমর্পণ!
এই ঘটনার শেষে আল্লাহ বলেন,
“হে ইব্রাহিম! তুমি সত্যিই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ।”
এরপর আল্লাহ জান্নাত থেকে একটি ভেড়া পাঠিয়ে দেন এবং সেটা কোরবানি করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণেই কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানরা কোরবানি পালন করবে।
আরো পড়ুনঃ মহানবী (সাঃ) যেভাবে বিবাদ মেটাতেন ! শান্তির দূত হিসেবে তাঁর অনন্য দৃষ্টান্ত
নবীজি (সা.) এর সময়ে কোরবানির ঈদ! কেমন ছিল?
মক্কা থেকে মদিনায়ঃ দুই ঈদের প্রবর্তন
মহানবী (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করলেন, তখন স্থানীয় লোকজন দুইটি দিন খেলাধুলা ও উৎসব করত। নবীজি তাদের বললেনঃ "এটা কী?"
তারা বলল, “আমরা জাহেলিয়াত যুগ থেকে এই দিনগুলোতে আনন্দ করি।”
তখন নবীজি (সা.) বললেনঃ
“আল্লাহ তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন – ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।”
(আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪)
সেই থেকে মুসলিম সমাজে এই দুই ঈদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মহানবী (সা.) নিজ হাতে কোরবানি করতেন
কেমন পশু কোরবানি করতেন?
- শিংওয়ালা
- স্বাস্থ্যবান
- দাতওয়ালা সাদা-কালো ভেড়া
- দয়া ও মমতা সহকারে জবাই করতেন
হাদীসে এসেছেঃ
“তিনি দুইটি সুন্দর, শিংওয়ালা ভেড়া কোরবানি করেন। নিজ হাতে কিবলামুখী করে দোয়া পড়ে জবাই করেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৬)
তিনি দোয়া পড়ে নিজের হাতে ছুরি চালাতেন এবং কোরবানির সময় সাহাবীদের বলতেনঃ
“তোমরা তোমাদের কোরবানির পশুর প্রতি দয়া করো, ছুরি ধারালো করো।”
কোরবানির সময় দোয়া কী পড়তেন?
মহানবী (সা.) কোরবানির সময় পড়তেনঃ
“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা হাযা মিংকা ওয়া লাকা।”
অর্থঃ “আল্লাহর নামে, আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! এটা তোমার কাছ থেকে পাওয়া, তোমার উদ্দেশ্যেই।”
আমরা অনেক সময় দোয়া না পড়ে জবাই করে ফেলি, অথচ এ দোয়া কোরবানির আত্মিক তাৎপর্য বহন করে। অর্থাৎ কোরবানি কোনো মাংস বিলানো না, বরং ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ।
কোরবানির মাংস বণ্টনের আদর্শ নিয়ম
নবীজি (সা.) কিভাবে বণ্টন করতেন?
৩। এক তৃতীয়াংশ বিলিয়ে দিতেন গরিব-দুঃখীদের মাঝে
আজকের দিনে আমরা দেখি, কেউ কেউ মাংস জমিয়ে রাখেন আবার কেউ কেউ সব দান করে দেন। অথচ সুন্নাহ হলো - তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখা অপর এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য রাখা এবং বাকি একভাগ গরীবদের মাঝে সাহায্য করে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ ও নির্দেশনা, যা আমরা ভুলে যাচ্ছি
১। পশু কেনার সময় নিয়ত ঠিক রাখা
শুধু দাম, গরুর ওজন আর শিং না দেখে – এটা যেন আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি বলেই ভাবি।
২। পশু ভালোভাবে যত্ন নেওয়া
নবীজি (সা.) কোরবানির পশুকে কষ্ট না দিতে বলতেন। আমরা অনেকে ঈদের আগে গরুকে রাস্তায় বেঁধে রাখি, খাবার ঠিক মতো দিই না – এটা অনুচিত।
৩। কোরবানির আগে গোসল ও উত্তম পোশাক
ঈদের দিনে পরিষ্কার কাপড় পরা, আতর ব্যবহার করা – নবীজির সুন্নাহ।
৪। ঈদের নামাজের পর কোরবানি
ঈদের নামাজ না পড়ে আগে কোরবানি করা হলে, সেটা গরুর মাংস কাটার মতোই হয়, ইবাদত হয় না।
আরো পড়ুনঃ পরিবেশ রক্ষায় নবীজি (সা.) এর ১০টি অসাধারণ শিক্ষা সম্পর্কে জেনে নিন।
কোরবানির দিন মহানবীর (সা.) আমলে কী কী সুন্নাহ ছিল?
ঈদের আগের রাতেই প্রস্তুতি
- নখ, চুল না কাটা – সুন্নাহ অনুযায়ী
- ভালো পোশাক ও আতর ব্যবহার
- সকালবেলা গোসল
- ঈদের নামাজ পড়ে কোরবানি
নোটঃ
নবীজি (সা.) বলেছেন -
“যে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করে, তা শুধু মাংস কাটার মতো। ইবাদত নয়।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৫৭)
আজকের কিছু ভুল যা নবীজি (সা.) কখনও করতেন না
- অহংকার করে বড় গরু দেখানো
- কোরবানিকে শুধু মাংস উৎসব ভাবা
- কোরবানির সময় হাসাহাসি ও ভিডিও তোলা
- মাংস বণ্টনে আত্মীয় বা গরিবদের বাদ দেওয়া
- রাস্তার পাশে পশু কষ্ট দিয়ে রাখা
এসব আচরণ থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মহানবী (সা.) কোরবানিকে “ইবাদতের শীর্ষ পর্যায়” বলতেন - শুধু অনুষ্ঠান না।
আমাদের জন্য শেখার বিষয়ঃ
- আমরা যেন কোরবানি দিয়ে আল্লাহর আদেশ মানার প্রমাণ দিই
- নবীজি (সা.)–এর মতো দয়া ও ভক্তি নিয়ে কোরবানি করি
- পশুর প্রতি দয়া দেখাই, কষ্ট না দিই
- মাংস বণ্টনে গরিবদের প্রাধান্য দিই
- দোয়া পড়ে, নিয়ত সহি রেখে কোরবানি করি
কোরআন ও হাদীস থেকে কোরবানির মূল উদ্দেশ্য
আল্লাহ বলেনঃ
“আল্লাহর কাছে না পশুর মাংস পৌঁছে, না রক্ত। বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।”
(সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৭)
নবীজি (সা.) বলেছেনঃ
“কোরবানির দিনে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো পশু জবাই।”
(তিরমিযী)
আরো পড়ুনঃ শিক্ষাদানে মহানবী (সা.) এর ১২ কৌশল ! আধুনিক শিক্ষার জন্য অনুপ্রেরণা
উপসংহারঃ আমরা কী করতে পারি?
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কোরবানিকে শুধুই পশু জবাই নয়, বরং আল্লাহর আদেশে আত্মত্যাগের মহড়া হিসেবে দেখতেন।
আমরা যদি তাঁর সুন্নাহ মেনে চলি, তবে কোরবানি শুধু মাংস বিলানো নয় - বরং হবে আমাদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ।
আসুন, আমরা প্রত্যেক কোরবানির ঈদে নবীজির পথ অনুসরণ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কোরবানি করি।
যাইহোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url